বরফ গলে ৪৬ হাজার বছরের পোকারা জাগছে সাইবেরিয়ায়, ঘুম ভাঙলেই ঝাঁকে ঝাঁকে দেবে বাচ্চা !

বরফ গলছে। চির ধরছে হিমবাহে। গলে যাওয়া বরফের ভেতর থেকে জেগে উঠছে ঘুমিয়ে থাকা পোকারা। সাইবেরিয়ায় বরফে জমা হ্রদের (Siberian permafrost) ভেতরে ঘুমিয়ে ছিল সেইসব কৃমির মতো পোকারা। বরফ গলে গেলেই ফের ঘুম ভাঙবে সেইসব মৃত্যুদূতের। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়েক হাজার বছরের হিমশীতল পার্মাফ্রস্ট গলে যাচ্ছে। পার্মাফ্রস্ট (Siberian permafrost) হল পৃথিবীর উপরের বরফের স্তরের তলায় থাকা পাকাপাকি ভাবে জমাট বাঁধা মাটি। এর ফলে সেই বরফ-মাটির নীচে এত বছরের সুপ্ত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস মুক্ত হয়ে জেগে উঠছে। ঘুম ভাঙছে হাজার হাজার বছরের পুরনো পোকাদেরও। বরফ গলে গেলেই মুক্ত হয়ে তারা বংশবিস্তার করতে শুরু করবে।

‘প্লস জেনেটিক্স’ সায়েন্স জার্নালে এই প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। হাওয়াই ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাজার হাজার বছর ধরে বরফের নীচে ঘুমিয়ে ছিল সেই সব পোকারা। বরফ গলে (Siberian permafrost) গেলেই বেরিয়ে এসে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে বাচ্চা দেবে।পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করবে। বরফের নীচে হাজার হাজার বছর ধরে ক্রিপটোবায়োসিস (Cryptobiosis) স্টেজে ছিল সেইসব পোকারা। সরীসৃপরা যেমন শীতকালে শীতঘুম বা হাইবারনেশনে যায়, এই ধরনের পোকারাও বরফের নীচে তেমনই ঘুমন্ত অবস্থায় চলে গিয়েছিল। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাদের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, কিন্তু মৃত্যু হয়নি। বরফ সমাধিতে সুপ্ত অবস্থায় ছিল তারা। এই অবস্থাকেই বলে ক্রিপটোবায়োসিস। এবার বরফ গলে গেলেই তারা সেই স্টেজ থেকে বেরিয়ে জীবন ফিরে পাবে।

```

এর মধ্যেই তিব্বতীয় মালভূমিতে দুটি হিমবাহের মধ্যে ১৫ হাজার বছরের ভাইরাসের হদিশ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বরফের নীচে ৩৩ রকম ভাইরাসের জিনোমের খোঁজ মিলেছে, যার মধ্যে ২৮টি একেবারেই নতুন ভাইরাস বিজ্ঞানীদের জানাশোনার বাইরে। গবেষকরা বলছেন, বরফের মধ্যে কম তাপমাত্রায় থাকায় এইসব ভাইরাসের জিন এখনও সক্রিয় রয়েছে। তবে কোনটি কতটা সংক্রামক এখনও জানা যায়নি। বরফ পরিষ্কার করে ভাইরাল জিনোমের নমুনা ল্যাবরেটরিতে নিয়ে এসে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন গবেষকরা।বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন দিন কিন্তু আসতে চলেছে।

আর বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণঘাতী অতীতের অনেক মাইক্রোবস ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বরফের নীচে চাপা পড়ে থাকা একাধিক প্রাণঘাতী জীবাণুর খোঁজ পেয়েছেন। যেমন ২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা আলাস্কার একটি বরফ হ্রদ থেকে ৩২ হাজার বছরের পুরনো এক ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পেয়েছিলেন। ২০০৭ সালে আন্টার্কটিকার বরফে চাপা পড়ে থাকা ৮০ লক্ষ বছর পুরনো এক ব্যাকটেরিয়ার হদিশও পেয়েছিলেন গবেষকরা।

```

সুতরাং পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি এই ভাবেই বাড়তে থাকে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের পথ আরো প্রশস্ত হয় সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে মানুষ এই পৃথিবীতে বসবাসের জন্য বিভিন্ন রকমের সমস্যায় পড়তে পারে এই বিষয়টি পরিষ্কার।